ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার সাত ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভাটা: বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা

77444মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::
কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায়=র সাত ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ব্যাপক ভাটা পড়েছে। পেকুয়ার বেশিরভাগ মানুষ জানেনা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের চরম দূর্নীতি ও অদক্ষতার কারনেও পেকুয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবেও বিবেচনা করছেন স্থানীয়রা। গত ৩/৪ বছর ধরে পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পার্শ্ববতী চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা বিধান কান্তি রুদ্র। সেই সাথে তিনি কুতুবদিয়া উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন কালে চরম অদক্ষতার ফলে ও নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে পেকুয়ায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভাটা পড়েছিল। আর তিনি গত এক বছর পূর্বে অন্যত্র বদলী হন। যেকুয়ায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. আতিকুল ইসলাম। এ কর্মকর্তা যোগদান করার পরও পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা। আর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে চরম গাফেলতির কারনেই পেকুয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দুই লক্ষাধিক। সাত ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস সদর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের বিলাহাসুরা, মইয়াদিয়া, বাগুজারা, গোয়াখালী, জালিয়াখালী ও ছিরাদিয়ার মতো প্রত্যন্ত  গ্রামেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়েনা। এসব গ্রামগুলোর প্রতিটি পরিবারেই ৫-৬ জনের অধিক সদস্য রয়েছে। অথচ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের শ্লোগান হচ্ছে ‘দুইটির চেয়ে বেশি নয়, একটি হলে ভাল হয়’ সেই মধুর শ্লোগান যেন সরকারী কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সদর ইউনিয়নের ওইসব এলাকাগুলোতে নি¤œ আয়ের পরিবার গুলোতেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবটা বেশি। এসব নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো জানেনা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। তাদের তারা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাউকে কোন দিন দেখেননি।

এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা পরিদর্শকের নামও তারা জানেনা। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কেন কিভাবে গ্রহণ করতে হয় সেটাও তারা জানেনা। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পর পরিবার পরিকল্পনার অভাবে দ্রত অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে মগনামা ইউনিয়নে।

সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এ্ ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, পশ্চিমকূল, কুম পাড়া, দরদরি ঘোনা, মাঝির পাড়া, হারুন মাতবর পাড়া, চেরাংঘোনা, কালার পাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রাম, উজানটিয়ার ইউনিয়নের করিয়ার দিয়া, নতুন ঘোনা, পেকুয়ার চর, রাজাখালী ইউনিয়নের বদি উদ্দিন পাড়া, মিয়া পাড়া, মৌলভী পাড়া, বকশিয়া ঘোনা, লাল জান পাড়া, টইটং ইউনিয়নের বটতলীর জুম পাড়া, সোনাইছড়ি, বন কানন, মধুখালী, হিরাবনিয়া, ধনিয়াকাটা, বারবাকিয়ার বুধামঝির ঘোনা, পাহাড়িয়াখালী, নোয়াখালী পাড়া, শীলখালীর সবুজ পাড়া, জারুলবুনিয়া, তারাবুনিয়ার ছাড়াসহ উপজেলার সাত ইউনিয়নের আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের নিু আয়ের পরিবারগুলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়েছে। এসব পরিবারগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল, পরিবার ছোট রাখার সুবিধা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির নানা সমম্যা, স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সহ আরো বহু পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা ও সচেতনতার মতো কোন কার্যক্রম সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা নেই।

এমনকি পেকুয়া উপজেলার একটি ইউনিয়নে কর্মরত এক পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের প্রায় ১৩ সন্তা রয়েছে। তিনিও নিজেও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি মানেননি। আর ১১ সন্তানের জনক ওই পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক তাদের বিভাগের শ্লোগান ‘দুইটির চেয়ে বেশি নয় একটি হলে ভাল’ সেটা মানলেন? আর তিনি কিভাবে মাঠ পর্যায়ে পরিবার ছোট রাখার সুফল ও পরিকল্পিত পরিবার গঠনের জন্য সাধারান জনগণকে উৎসাহিত করবেন এই প্রশ্নই এখন পেকুয়ার সবার মুখে মুখে।

অভিযোগ রয়েছে, ওইসব এলাকাগুলোতে কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধিকাংশ সরকারী কর্মচারীরা সঠিকভাবে সরকারী দায়িত্ব পালন করছেনা। পেকুয়ার মাঠ পর্যায়ের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসের পর মাস এভাবে তাদের উপর নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য ফাঁকি দিলেও কিন্তু বেতন-ভাতা যথাসময়ে উত্তোলন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বর্তমানে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

এছাড়াও পেকুয়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক নানা সরকারী কর্মসূচী মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন বিভাগ সরেজমিনে তদন্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো বহু চাঞ্চল্যেকর অনিয়ম, দূর্নীতি ও সরকারী আত্মসাৎসহ নানা ফিরিস্তি বেরিয়ে আসবে। পেকুয়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম নিজের উচ্ছে মতো দায়িত্ব পালন করছেন সরকারী দায়িত্ব। পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দারা মূলত এ কর্মকর্তার কারনেই পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কাংঙ্কিত সেবা পাচ্ছেনা এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন সমাজ।

এক পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের বাল্য বিয়ের প্রবণতাও বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জোর চেষ্টা চালিয়ে বাল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। কিছু অসাধু বিবাহ রেজিষ্টার ও জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতির কারণে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন এখনকার স্থানীয় সচেতন মহল। দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে জন সংখ্যা। জন সংখ্যার বৃদ্ধির প্রভাব গিয়ে সরাসরি পড়েছে কৃষি জমি ও কর্মসংস্থানের উপর। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পেকুয়ায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ও দিন দিন আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভাটা পড়ার বিষয়টি জানতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলামের সাথে গতকাল রোববার ( ২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা

পাঠকের মতামত: